ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আজ
বিশ্বজোড়া ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উত্তেজনার বারুদ জ্বালাতে পারে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত লড়াই বলেও আখ্যা দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার লড়াই যদি হয়ে থাকে বনেদিয়ানা আর ঐতিহ্যের স্মারক, ভারত-পাকিস্তান মানেই যেন উত্তেজনার পারদ আর আগুনে লড়াই।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় লড়াই মানে সেখানে শুধু ক্রিকেটই থাকে না। ক্রিকেট ছাপিয়ে সেখানে দুই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বৈরিতার কারণেই ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট লড়াই রূপ নিয়েছে অন্য মাত্রার।
রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে শেষ প্রায় ১০ বছর হতে চললো দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে মাঠে না ভারত-পাকিস্তান। উত্তেজনাঠাসা এই দুই দলের ম্যাচ দেখতে ভক্ত-সমর্থকদের একমাত্র ভরসা আইসিসি বা এসসিসির কোন ইভেন্ট। এই তো কয়দিন আগেই এশিয়া কাপে দুইবার এই দুই দলের লড়াই দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো ভক্তদের।
মাঠের বাইরে যেমন দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা পৌঁছে গেছে তুঙ্গে, মাঠের খেলাতেই দুই দল যেন সেয়ানে সেয়ান। কেউ যেন কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে নারাজ। এই সর্বশেষ এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ পাকিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠেছিলো ভারত। আর সুপার ফোরে এসে ভারতকে গুড়িয়েই সেই হারের প্রতিশোধ নিয়ে নেয় পাকিস্তান।
উপমহাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আজ মাঠের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে আরো একবার। গত বছর আরব আমিরাতের মাটিতে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৪ অক্টোবর দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। ঠিকঠিক এক বছর পর আবারও আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আবারো মুখোমুখি হচ্ছে চির প্রতিদ্বিন্দ্বী দুই দল। এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আবারো একবার হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ মানে মাঠের লড়াইয়ের বাইরেও দুই দেশের রাজনৈতিক যুদ্ধের আরো এক প্রতিরূপ। এবারো মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে শুরু হয়ে গেছে সেই যুদ্ধও। আগামীবছর পাকিস্তানের মাটিতে এশিয়া কাপের খালতে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব ও এসিসি সভাপতি জয় শাহ জানিয়েছিলেন, ‘আমরা পাকিস্তানে খেলতে যাবো না। পাকিস্তান সফরে দল যাবে কি-না সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেয়। এটা নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করবো না। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ (ভারত-পাকিস্তান বাদে) দেশে হবে।’
আর ভারতের এই ঘোষণার পরই ফুঁসে উঠে পাকিস্তান। ইটের জবাব যেন পাটকেল দিয়েই দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ভারত যদি এশিয়া কাপ খেলতে না যায় তাহলে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে আসতেও অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের সাবেকদের কেউ কেউ তো আরও এক কাঠি সরেস হয়ে আজকের ম্যাচই বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আজ মেলবোর্নে মাঠে নামার আগেই দুই দেশের পক্ষ থেকেই একের পর এক বাউন্সারে বেশ উত্তপ্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গন। পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ তো বলেই দিয়েছেন, এশিয়া কাপ নিয়ে জল ঘোলা করার প্রকৃত কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে ‘হাইপ’ তোলার চেষ্টা।
আসলেই শুধু ‘হাইপ’ তোলার চেষ্টা কিনা সে প্রশ্ন আপাতত এক পাশে সরিয়ে রাখলেও ভাওর-পাকিস্তানের আজকের লড়াইও চিরাচরিত নিয়মেই রূপ নিয়েছে উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিতে।
ভারতের কাছে তো আজকের লড়াই তো পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিয়ে নিজেদের সম্মান ফেরানোর। ঠিক এক বছর আগে গত বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে ভারতকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর রেকর্ড গড়েছিলো পাকিস্তান। সেদিন পাকিস্তানের পেসারদের সামলাতেই হিমশিম খেয়েছিলো রোহিত শর্মারা। এক শাহিন শাহ আফ্রিদিই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড।
আর ১৫২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের ঝড়েই ১০ উইকেটে ম্যাচ হারে ভারত। যে কোন বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের স্বাদ পায় ভারতীয় দল।
ভারতের কাছে আজকের ম্যাচটি সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার। বিশ্বকাপের মঞ্চে আবারও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে নিজেদের গৌরব তুলে আনা।
গত বিশ্বকাপের অই ম্যাচ বাদে অবশ্য দুই দলের লড়াইয়ে পরিসংখ্যানে এগিয়ে ভারতই। আন্তর্জাতিক টি-২০তে মুখোমুখি হওয়া ১১ ম্যাচের ৮টিতেই জয় পেয়েছে ভারত। পাকিস্তান জিতেছে মাত্র ৩ ম্যাচে।
এদিকে, সাম্প্রতিক ফর্ম অবশ্য দুই দলই সমানে সমান। খানিক ব্যবধানে হয়তো এগিয়ে থাকবে ভারতই। বিশ্বকাপে আসার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়, বিশ্বকাপে এসেও প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে, ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে পাকিস্তানকে। এরপর ইংল্যান্ডের কাছে সাত ম্যাচের সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে হারলেও দুর্দান্ত লড়াই করেছে পাকিস্তান। তবে এরপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশিয় সিরিজে বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান।
আজ দুই দলের মাঠের লড়াইটা যে হবে সমানে সমানে সেটি যেন বলার অপেক্ষা রাখে না দ্বিতীয়বার। তবে আজকের এই হাই ভোল্টেজ ম্যাচ নিয়ে রয়ে গেছে একটি দুঃশ্চিন্তা। মেলবোর্নের আকাশজুড়ে আজ বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে ভেস্তে যেতে পারে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই।
আজকের ম ইয়াচে দলীয় শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে থেকেই মাঠে নামবে ভারত। দলের সেরা পেসার জাসপ্রিত বুমরাহকে ছাড়াই বিশ্বকাপে আসতে হয়েছে রোহিত শর্মার দলকে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেরা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ইঞ্জুরি কাটিয়ে ফিরেছেন এই বিশ্বকাপের দলে। আজকের ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষনীয় লড়াইটাও হবে রোহিত-কোহলি বনাম শাহিন শাহ আফ্রিদির মধ্যে।
বুমরাহর অনুপস্থিটা আজ মেটাতে হবে ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদিপ সিং, মোহাম্মদ শামিদেরই। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের মূল শক্তি বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপেনিং জুটিকে ভারতের বোলাররা কতটা দমিয়ে রাখতে পারে সেটাই দেখা যাবে মেলবোর্নের বাইশ গজে।
https://datastudio.google.com/reporting/6f04ba9b-e3f8-4561-89a6-91e92e7e73dc
https://vk.com/@543006327-2-black-panther-wakanda-forever-2022-hd1080p
https://yamcode.com/yuvd82af4h
Comments
Post a Comment